Profit and loss statement পড়ার পদক্ষেপ

 Profit and Loss Statement (P&L Statement), বা Income Statement, একটি আর্থিক নথি যা একটি কোম্পানির আয়, খরচ, এবং লাভ বা ক্ষতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল (ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক) অনুযায়ী। এটি কোম্পানির আর্থিক কর্মক্ষমতা বুঝতে সাহায্য করে এবং ব্যবসার লাভজনকতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

Profit and Loss Statement এর উপাদান:

P&L Statement সাধারণত কয়েকটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকে। এটি পড়তে হলে নিম্নলিখিত উপাদানগুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:

1.Revenue (বিক্রয়):

এটি কোম্পানির প্রধান আয় বা বিক্রির পরিমাণ, যা পণ্য বা সেবা বিক্রির মাধ্যমে আয় করা হয়। এটি কোম্পানির ব্যবসার আয় উৎপাদনের মূল উৎস।

  • Gross Revenue: কোম্পানির মোট আয়, কোনো খরচ বাদ না দিয়েই।
  • Net Revenue: বিক্রয়ের পর বেচা না হওয়া পণ্য বা ডিসকাউন্ট বাদ দিয়ে আসল আয়।

বিশ্লেষণ:
যত বেশি Revenue বা বিক্রয় হবে, কোম্পানির আয়ের পরিমাণ তত বাড়বে, যা সাধারণত ভাল সংকেত।

2. Cost of Goods Sold (COGS) বা বিক্রির খরচ:

COGS হলো সেই খরচ যা সরাসরি পণ্য বা সেবা উৎপাদনে ব্যয় হয়। এটি অন্তর্ভুক্ত করে কাঁচামাল, শ্রম, এবং অন্যান্য উৎপাদন খরচ।

ফর্মুলা:

COGSOpening Stock Purchases − Closing Stock

বিশ্লেষণ:
যদি COGS খুব বেশি থাকে, তবে কোম্পানির লাভ কম হবে, কারণ বিক্রির সাথে খরচের ভারসাম্য ঠিকভাবে মিলছে না।

3. Gross Profit (গ্রস প্রফিট):

Gross Profit হলো বিক্রয় থেকে COGS বাদ দিয়ে পাওয়া মুনাফা। এটি কোম্পানির লাভের প্রাথমিক স্তর হিসেবে গণ্য হয়।

ফর্মুলা:

Gross Profit=RevenueCOGS\text{Gross Profit} = \text{Revenue} - \text{COGS}

বিশ্লেষণ:
গ্রস প্রফিট যদি ভাল হয়, তবে তা কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রমের লাভজনকতা দেখায়। এর মানে, কোম্পানি তার উৎপাদন বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি করছে এবং সেগুলির খরচ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

4. Operating Expenses (অপারেটিং খরচ):

এটি কোম্পানির সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হওয়া খরচ। এটি সেলস, মার্কেটিং, প্রশাসনিক খরচ, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করে।

  • Selling, General & Administrative Expenses (SG&A): এটি সরাসরি উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে কোম্পানির সেবামূলক বা মার্কেটিং কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ।

বিশ্লেষণ:
যত বেশি অপারেটিং খরচ, তত বেশি গ্রস প্রফিটের তুলনায় ব্যয় বাড়ে, এবং এই খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখলে কোম্পানির লাভ বাড়ানো যায়।

5. Operating Profit (EBIT):

Operating Profit বা EBIT (Earnings Before Interest and Taxes) হলো কোম্পানির মূল অপারেটিং কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত লাভ, যেখানে শুধুমাত্র উৎপাদন, বিক্রি, এবং অপারেটিং খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

ফর্মুলা:

Operating Profit (EBIT)Gross Profit − Operating Expenses

বিশ্লেষণ:
এই লাভ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর পরিচালনার দক্ষতা দেখায়। EBIT থেকে বোঝা যায় যে কোম্পানি কতটা সফলভাবে তার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

6. Non-operating Income/Expenses (অপারেটিং নয় এমন আয়/খরচ):

এটি কোম্পানির মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বাইরের আয় বা খরচ। যেমন, বিনিয়োগ থেকে আয়, বা কোনো এককালীন খরচ।

বিশ্লেষণ:
অপারেটিং নয় এমন আয় বা খরচ কোম্পানির সাধারণ কার্যক্রমের বাইরে ঘটে, তবে এটি একটি কোম্পানির সার্বিক মুনাফায় প্রভাব ফেলতে পারে।

7. Interest and Taxes (সুদের খরচ এবং কর):

এই অংশে সুদের খরচ (যদি কোম্পানির ঋণ থাকে) এবং করের পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ফর্মুলা:

Net Profit Before Tax=EBITInterest\text{Net Profit Before Tax} = \text{EBIT} - \text{Interest}

বিশ্লেষণ:
সুদের খরচ একটি কোম্পানির লাভের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ ঋণ এবং সুদের খরচ থাকলে কোম্পানির লাভ কম হতে পারে।

8. Net Profit (নিট প্রফিট):

Net Profit হলো সব খরচ এবং ট্যাক্স বাদ দেওয়ার পর কোম্পানির চূড়ান্ত লাভ। এটি কোম্পানির আয়ের মোট কার্যকারিতা এবং মুনাফা দেখায়।

ফর্মুলা:

Net Profit Operating Profit − Interest − Taxes

এই পরিমাণ কোম্পানির লাভজনকতা বোঝায় এবং এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান ভিত্তি হতে পারে।

P&L Statement থেকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

  1. আয় এবং লাভের প্রবণতা: অতীতের সঙ্গে তুলনা করে দেখুন বিক্রয়, লাভ, এবং খরচের মধ্যে কোনো প্রবণতা আছে কি না। যদি বিক্রয় এবং লাভ বাড়ছে, তবে কোম্পানি ভালো অবস্থায় রয়েছে।

  2. মার্জিন বিশ্লেষণ: Gross Profit Margin, Operating Margin, এবং Net Profit Margin বিশ্লেষণ করুন। এগুলি কোম্পানির লাভের হার এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা দেখায়।

  3. ব্যয় বিশ্লেষণ: অপারেটিং খরচ এবং অন্যান্য খরচের বিশ্লেষণ করুন। যদি কোম্পানি খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়, তবে এটি লাভজনকতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

  4. ঋণ পরিমাণ এবং সুদের খরচ: ঋণের পরিমাণ এবং সুদের খরচ বিশ্লেষণ করুন। অধিক ঋণ এবং সুদের খরচ কোম্পানির লাভে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

  5. নেট প্রফিট: কোম্পানির শেষ লাভ বা ক্ষতি কত হয়েছে তা দেখুন। এটি কোম্পানির আর্থিক স্হিতি ও ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

Profit and Loss Statement (P&L Statement) পড়ার মাধ্যমে একটি কোম্পানির আর্থিক স্হিতি, লাভজনকতা এবং কার্যক্রমের দক্ষতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল, যা কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে এবং ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

Study material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার