অপশন চেইন বিশ্লেষণ

অপশন চেইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক উপকরণ যা ট্রেডার এবং বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন স্টক এবং সূচকের অপশন মার্কেটে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবহার করেন। এটি একটি টেবুলার ফরম্যাটে অপশন কন্ট্রাক্টের সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়, যেখানে স্ট্রাইক প্রাইস, ওপেন ইন্টারেস্ট, ভলিউম, বিড, আস্ক, এবং ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। অপশন চেইন বিশ্লেষণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

অপশন চেইনের মূল ধারণা

অপশন চেইন হল একটি তালিকা, যেখানে একটি নির্দিষ্ট স্টকের কল অপশন এবং পুট অপশনগুলোর জন্য উপলভ্য সমস্ত স্ট্রাইক প্রাইস এবং এক্সপায়ারি তারিখ দেখানো হয়। এটি ট্রেডারদের কাছে বাজারের বর্তমান অনুভূতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। অপশন চেইনের দুইটি মূল বিভাগ হল:

  1. কল অপশন (Call Option): যেখানে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্টক নির্ধারিত মূল্যে ভবিষ্যতে কেনার অধিকার পায়।
  2. পুট অপশন (Put Option): যেখানে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্টক নির্ধারিত মূল্যে ভবিষ্যতে বিক্রির অধিকার পায়।

অপশন চেইন বিশ্লেষণের ধাপসমূহ

অপশন চেইন বিশ্লেষণ করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:

  1. অপশন চেইন ডেটা সংগ্রহ: প্রথমে একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে অপশন চেইন ডেটা সংগ্রহ করতে হবে। বেশিরভাগ ব্রোকারেজ এবং ফাইনান্স ওয়েবসাইটে এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

  2. স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: ট্রেডারদের স্ট্রাইক প্রাইস নির্ধারণ করতে হবে যা বর্তমান স্টক প্রাইসের কাছাকাছি। এটিকে "অ্যাট দ্য মানি" স্ট্রাইক প্রাইস বলা হয়।

  3. ওপেন ইন্টারেস্ট এবং ভলিউম বিশ্লেষণ:

    • ওপেন ইন্টারেস্ট (Open Interest): বাজারে বর্তমানে কতগুলো অপশন কন্ট্রাক্ট ওপেন অবস্থায় আছে তা নির্দেশ করে। ওপেন ইন্টারেস্ট বেশি হলে বাজারে ট্রেডারদের আগ্রহ বেশি বোঝায়।
    • ভলিউম (Volume): নির্দিষ্ট সময়ে কতগুলো কন্ট্রাক্ট কেনা বা বিক্রি হয়েছে তা নির্দেশ করে। বেশি ভলিউম বাজারের উচ্চ কার্যকলাপ নির্দেশ করে।
  4. ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি (Implied Volatility): এটি বাজারের ভবিষ্যৎ দামের অস্থিরতার পূর্বাভাস দেয়। ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি বেশি হলে, বাজারে ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা বেশি হতে পারে।

  5. সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করা: অপশন চেইনের ওপেন ইন্টারেস্ট এবং ভলিউম ব্যবহার করে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা যায়। এটি স্টক প্রাইসের সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

  6. কলে এবং পুটের অনুপাত বিশ্লেষণ:

    • কল/পুট অনুপাত (Call/Put Ratio): এটি বাজারের Sentiment নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    • বেশি কল অনুপাত বাজারের বুলিশ মনোভাব নির্দেশ করে, আর বেশি পুট অনুপাত বেয়ারিশ মনোভাব নির্দেশ করে।

অপশন চেইন বিশ্লেষণের গুরুত্ব

  1. বাজারের দিক নির্ধারণ: অপশন চেইন ব্যবহার করে বাজারের বর্তমান মনোভাব বোঝা যায়।
  2. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: এটি ঝুঁকির স্তর নির্ধারণে সহায়ক।
  3. ট্রেডিং কৌশল তৈরি: অপশন চেইনের মাধ্যমে সঠিক এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা সম্ভব।
  4. লিকুইডিটি মূল্যায়ন: ওপেন ইন্টারেস্ট এবং ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে লিকুইডিটি পরিমাপ করা যায়।

অপশন চেইন বিশ্লেষণ অপশন ট্রেডিংয়ের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কেবল বাজারের বর্তমান অবস্থা নির্ধারণ করতেই নয়, বরং ভবিষ্যৎ ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতেও সহায়ক। সঠিক ডেটা বিশ্লেষণ এবং যথাযথ কৌশল প্রয়োগ করে ট্রেডাররা অপশন মার্কেটে লাভবান হতে পারেন। তবে, এটির সাথে ঝুঁকি সম্পর্কিত সতর্কতাও মাথায় রাখা জরুরি।


Video material : 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার