SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

সিপ (SIP) বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান আজকাল প্রায় সবাই করেন। নিজের অবসর জীবন, মেয়ের পড়াশোনা বা ছেলের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করা হয়। কিন্তু যদি আপনি টাকা তোলার সময় দেখেন যে বাজার ধসের কারণে আপনার SIP ফান্ডের অর্ধেক মূল্য কমে গেছে, তখন কী করবেন? ঝুঁকি কীভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

সিপ-এ ঝুঁকির বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সাধারণত সবাই জানেন, মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সিপ-এ বিনিয়োগ করলে কিছু বছর পর বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু লাভের কথা যতটা বলা হয়, ঝুঁকির বিষয়ে ততটা আলোচনা করা হয় না। ইতিহাসে বাজারের ওঠানামা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সেনসেক্স ১০০ থেকে ৮০,০০০-এ পৌঁছাতে ৪৪ বছর লেগেছে। এই সময়ে সেনসেক্স বহুবার ৫০%-এর বেশি পড়ে গেছে।

SIP বিনিয়োগকারীর অভিজ্ঞতা

যদি কেউ ১৯৯০ সাল থেকে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা SIP-এ বিনিয়োগ করেন, তার মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা, কিন্তু তার বর্তমান ফান্ড মূল্য ২৫ লাখ টাকারও বেশি। এই ফান্ড তৈরি করতে বিনিয়োগকারীকে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, SIP বিনিয়োগকারীকে বাজারের বিভিন্ন পতন দেখতে হয়েছে। ২০০০ সালের শীর্ষে, তার ফান্ডের লাভ ১০০%-এর বেশি ছিল। কিন্তু ডটকম বাবল ফেটে যাওয়ার পর, তার SIP পোর্টফোলিওর মূল্য বিনিয়োগের চেয়েও কমে যায়। এমন পরিস্থিতি হলে আপনি অবসরের জন্য সঞ্চিত টাকার অর্ধেকও হয়তো পাবেন না।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা

বাজার দীর্ঘমেয়াদে বাড়ে, কিন্তু কখন ধস হবে, তা কেউ বলতে পারে না। ২০১৯ সালের শেষে কেউ ভাবেনি যে সারা পৃথিবী লকডাউন হয়ে যাবে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট বা ২০২০ সালের কোভিড ধসও কেউ কল্পনা করেনি। বাজার ধস এড়ানো সম্ভব নয়, তবে এটি সামলানো সম্ভব।

সমাধান: সোনা ও ইকুইটির সমন্বয়

সিপ-এ ঝুঁকি কমানোর জন্য শুধু বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টকে বিনিয়োগ করাই যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসে বিনিয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ইকুইটি এবং সোনা। অনিশ্চয়তার সময়ে, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছেড়ে সোনার মতো নিরাপদ সম্পদে চলে যান।




ইকুইটি এবং সোনার সম্পর্ক

অনেকের ধারণা, ইকুইটি এবং সোনা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এদের সম্পর্ক (co-relation) ০.৯১৭, অর্থাৎ দুটিই একসঙ্গে ওঠানামা করে। তবে ধসের সময় এরা পুরোপুরি বিপরীত দিকে চলে। ইকুইটি পড়লে সোনার দাম বাড়ে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট ও ২০২০ সালের কোভিড ধসে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

সোনা ও ইকুইটি মিশ্রণের উপকারিতা

ধরা যাক, ২০০৭ থেকে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা শুধুমাত্র ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেছেন। এতে আপনার মোট বিনিয়োগ হবে ২০ লাখ টাকা, আর ফান্ডের বর্তমান মূল্য দাঁড়াবে ৬২ লাখ টাকা। কিন্তু কোভিড ধসে আপনার পোর্টফোলিওর মূল্য ৩০% কমে যেত।

অন্যদিকে, যদি আপনি ইকুইটি ও সোনায় সমানভাবে (৫,০০০ টাকা করে) বিনিয়োগ করতেন, তবে আপনার ফান্ডের মূল্য দাঁড়াত ৫৯ লাখ টাকা, আর কোভিড ধসে আপনার ক্ষতি হতো মাত্র ১০%।


শুধুমাত্র ইকুইটিতে বিনিয়োগ করে আপনি সামান্য বেশি অর্থ পেতে পারেন, তবে এতে ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে, ইকুইটি এবং সোনার সমন্বয়ে বিনিয়োগ করলে সামান্য কম লাভ হলেও মানসিক শান্তি পাবেন। যারা সোনায় বিনিয়োগ করতে চান, তারা গোল্ড বি ইটিএফ বা গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবহার করতে পারেন। সোনা যুক্ত করার ফলে আপনার পোর্টফোলিওর অস্থিরতা কমবে এবং ঝুঁকি সামলানো সহজ হবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার