অপশন প্রিমিয়াম (Option Premium) কী?

-

 অপশন প্রিমিয়াম হলো একটি অপশন কন্ট্র্যাক্টের মূল্য বা দাম যা অপশন ক্রেতা অপশন বিক্রেতাকে প্রদান করে। অপশন প্রিমিয়াম হল সেই মূল্য যা আপনি একটি কল বা পুট অপশন কিনতে বা বিক্রি করতে পরিশোধ করেন। এই প্রিমিয়ামটি দুইটি প্রধান উপাদানে বিভক্ত হয়:

  1. Intrinsic Value (ইনট্রিন্সিক ভ্যালু)
  2. Time Value (টাইম ভ্যালু)

এই দুটি উপাদান অপশন প্রিমিয়ামের মোট মূল্য গঠন করে।

Intrinsic Value (ইনট্রিন্সিক ভ্যালু) কী?

Intrinsic Value (ইনট্রিন্সিক ভ্যালু) হলো অপশনটির অন্তর্নিহিত মূল্য, যা অপশনটির প্রাথমিক মূল্য (স্ট্রাইক প্রাইস) এবং তার অধিকারী স্টকের বর্তমান বাজারমূল্যের (Underlying Asset Price) মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে।

  • Call Option এর জন্য: যদি স্টকটির বর্তমান বাজারমূল্য স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকে, তবে কল অপশনের ইনট্রিন্সিক ভ্যালু থাকে।
    • ইনট্রিন্সিক ভ্যালু = স্টক মূল্য - স্ট্রাইক প্রাইস
    • উদাহরণ: ধরুন স্টকটির বাজারমূল্য $120 এবং কল অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস $100 হলে, ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হবে $120 - $100 = $20।
  • Put Option এর জন্য: পুট অপশনের ইনট্রিন্সিক ভ্যালু তখনই থাকে যখন স্টকটির বর্তমান বাজারমূল্য স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে থাকে।
    • ইনট্রিন্সিক ভ্যালু = স্ট্রাইক প্রাইস - স্টক মূল্য
    • উদাহরণ: যদি স্টকটির বাজারমূল্য $80 এবং পুট অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস $100 থাকে, তবে ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হবে $100 - $80 = $20।

ইনট্রিন্সিক ভ্যালু:

  • কল অপশন: স্টকটির মূল্য যদি স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকে, তবে কল অপশনটির ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হবে (স্টক মূল্য - স্ট্রাইক প্রাইস)।
  • পুট অপশন: স্টকটির মূল্য যদি স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে থাকে, তবে পুট অপশনটির ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হবে (স্ট্রাইক প্রাইস - স্টক মূল্য)।

যদি অপশনটি "অ্যাট দ্য মনি" (ATM) থাকে, তাহলে ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হবে 0। অর্থাৎ, কোন লাভ নেই।

Time Value (টাইম ভ্যালু) কী?

Time Value (টাইম ভ্যালু) হলো অপশন প্রিমিয়ামের সেই অংশ যা অপশনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরও সময় থাকার কারণে হয়। এটি অপশনটির মূল্যকে তার ইনট্রিন্সিক ভ্যালু ছাড়াও বাড়িয়ে দেয়, এবং এটি মার্কেটের আশা ও সম্ভাবনা উপর নির্ভর করে যে স্টকটির মূল্য ভবিষ্যতে কিভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

টাইম ভ্যালু সাধারণত ইনট্রিন্সিক ভ্যালুর উপরে থাকে, এবং এর মান অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:

  • সময়: অপশনটির মেয়াদ যত বেশি হবে, তার টাইম ভ্যালু তত বেশি হতে পারে, কারণ অধিক সময়ে স্টকটির দাম আরো পরিবর্তন হতে পারে।
  • ভলাটিলিটি (Volatility): স্টকের দাম যদি অতিরিক্ত ওঠানামা করে, তবে টাইম ভ্যালু বাড়তে পারে। কারণ ভবিষ্যতে দাম বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, যা অপশনটির লাভজনক হতে পারে।
  • স্ট্রাইক প্রাইস এবং বাজার মূল্য: যদি স্টকের মূল্য স্ট্রাইক প্রাইসের কাছাকাছি থাকে, তবে টাইম ভ্যালু বেশি থাকবে।

টাইম ভ্যালু:

  • টাইম ভ্যালু = অপশন প্রিমিয়াম - ইনট্রিন্সিক ভ্যালু
  • উদাহরণ: যদি একটি কল অপশনের প্রিমিয়াম $25 হয় এবং ইনট্রিন্সিক ভ্যালু $20 হয়, তাহলে টাইম ভ্যালু হবে $25 - $20 = $5।

যতই অপশনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হবে, টাইম ভ্যালু কমে আসবে, কারণ কম সময়ে দাম ওঠানামা করার সম্ভাবনা কম থাকে। এটিকে "টাইম ডিকেয়" (Time Decay) বলা হয়।

অপশন প্রিমিয়াম এর উপাদান:

অপশন প্রিমিয়ামকে এইভাবে ভাঙা যেতে পারে:

অপশন প্রিমিয়াম=ইনট্রিন্সিক ভ্যালু+টাইম ভ্যালু\text{অপশন প্রিমিয়াম} = \text{ইনট্রিন্সিক ভ্যালু} + \text{টাইম ভ্যালু}

যখন অপশনটি "ইন দ্য মনি" (In the Money) থাকে, তখন ইনট্রিন্সিক ভ্যালু থাকবে। যদি অপশনটি "আউট অফ দ্য মনি" (Out of the Money) থাকে, তবে তার ইনট্রিন্সিক ভ্যালু শূন্য হবে এবং শুধুমাত্র টাইম ভ্যালু থাকবে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, আপনি একটি কল অপশন কিনেছেন, যার নিম্নলিখিত তথ্য:

  • স্ট্রাইক প্রাইস: $50
  • স্টক মূল্য: $60
  • অপশন প্রিমিয়াম: $15

এখন, আসুন ইনট্রিন্সিক ভ্যালু এবং টাইম ভ্যালু বের করি:

  1. ইনট্রিন্সিক ভ্যালু:

    • কল অপশনের জন্য:
    ইনট্রিন্সিক ভ্যালু=স্টক মূল্য−স্ট্রাইক প্রাইস=60−50=10\text{ইনট্রিন্সিক ভ্যালু} = \text{স্টক মূল্য} - \text{স্ট্রাইক প্রাইস} = 60 - 50 = 10

  2. টাইম ভ্যালু:

    • টাইম ভ্যালু = অপশন প্রিমিয়াম - ইনট্রিন্সিক ভ্যালু
    টাইম ভ্যালু=15−10=5\text{টাইম ভ্যালু} = 15 - 10 = 5

অতএব, অপশনটির প্রিমিয়াম $15 এবং তার মধ্যে $10 ইনট্রিন্সিক ভ্যালু এবং $5 টাইম ভ্যালু রয়েছে।


  • ইনট্রিন্সিক ভ্যালু হলো অপশনটির বাস্তব মূল্য, যা স্টক বা অন্যান্য অধিকারী সম্পদের মূল্য এবং স্ট্রাইক প্রাইসের মধ্যে পার্থক্য।
  • টাইম ভ্যালু হলো অপশন প্রিমিয়ামের সেই অংশ, যা অপশনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টাইম ফ্যাক্টর এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তনগুলির উপর নির্ভর করে।

অপশন প্রিমিয়াম বিশ্লেষণ করলে আপনি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন কিভাবে অপশনটির দাম নির্ধারণ হয় এবং কীভাবে মার্কেটের পরিবর্তনগুলি আপনার লাভ বা ক্ষতির উপর প্রভাব ফেলে।

Video material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

-
ছবি
Straddle একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল , যেখানে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং একই এক্সপায়ারি ডেট সহ একটি Call Option এবং একটি Put Option একসঙ্গে কেনা হয়। এটি মূলত বাজারের উল্লেখযোগ্য ভোলাটিলিটি আশা করা হলে ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলটি বাজারের দিক সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো অনুমানের প্রয়োজন হয় না , কারণ এতে লাভের সম্ভাবনা বাজারের উত্থান বা পতন , উভয় ক্ষেত্রেই থাকে। Straddle- এর দুটি প্রকার রয়েছে : Long Straddle এবং Short Straddle । Long Straddle- এ একটি Call Option এবং একটি Put Option কেনা হয়। এই পদ্ধতিতে লাভ তখন হয় যখন স্টকের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে বা কমে। অন্যদিকে , Short Straddle- এ একই ধরনের অপশন বিক্রি করা হয়। এতে লাভের সুযোগ থাকে যদি স্টকের দাম স্থিতিশীল থাকে। তবে Short Straddle- এর ঝুঁকি বেশি , কারণ স্টকের দাম বড় পরিবর্তন করলে এটি অসীম ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। Long Straddle ব্যবহৃত হয় যখন বাজারে উচ্চ ভোলাটিলিটি আশা করা হয় এবং স্টকের দাম বড় পরিসরে পরিবর্তিত হতে প...
আরও পড়ুন

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

-
ছবি
সিপ (SIP) বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান আজকাল প্রায় সবাই করেন। নিজের অবসর জীবন, মেয়ের পড়াশোনা বা ছেলের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করা হয়। কিন্তু যদি আপনি টাকা তোলার সময় দেখেন যে বাজার ধসের কারণে আপনার SIP ফান্ডের অর্ধেক মূল্য কমে গেছে, তখন কী করবেন? ঝুঁকি কীভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। সিপ-এ ঝুঁকির বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ? সাধারণত সবাই জানেন, মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সিপ-এ বিনিয়োগ করলে কিছু বছর পর বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু লাভের কথা যতটা বলা হয়, ঝুঁকির বিষয়ে ততটা আলোচনা করা হয় না। ইতিহাসে বাজারের ওঠানামা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সেনসেক্স ১০০ থেকে ৮০,০০০-এ পৌঁছাতে ৪৪ বছর লেগেছে। এই সময়ে সেনসেক্স বহুবার ৫০%-এর বেশি পড়ে গেছে। SIP বিনিয়োগকারীর অভিজ্ঞতা যদি কেউ ১৯৯০ সাল থেকে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা SIP-এ বিনিয়োগ করেন, তার মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা, কিন্তু তার বর্তমান ফান্ড মূল্য ২৫ লাখ টাকারও বেশি। এই ফান্ড তৈরি করতে বিনিয়োগকারীকে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, SIP বিনিয়োগকারীকে বাজারের বিভিন্ন পতন দে...
আরও পড়ুন

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার

-
ছবি
 বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Bearish Candlestick Pattern) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ চার্টিং পদ্ধতি যা বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার সংকেত প্রদান করে। এই প্যাটার্নগুলো বাজারে বিক্রেতাদের আধিপত্য নির্দেশ করে এবং ভবিষ্যতে দামের পতনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। শেয়ারবাজার, ফরেক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি, এবং অন্যান্য আর্থিক বাজারে ট্রেডারদের জন্য বেয়ারিশ প্যাটার্ন বোঝা এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন কী? বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এমন একটি চার্ট প্যাটার্ন যা নির্দেশ করে যে বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হতে চলেছে। এই প্যাটার্নগুলি সাধারণত উচ্চ প্রাইস থেকে নিম্ন প্রাইসের দিকে দামের পরিবর্তন বোঝায়। বৈশিষ্ট্য: ক্লোজিং প্রাইস ওপেনিং প্রাইসের চেয়ে কম হয়। বড় বডি এবং ছোট উইক/শ্যাডো থাকতে পারে। লাল বা কালো রঙের ক্যান্ডেল, যা দামের নিম্নগতি নির্দেশ করে। বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের প্রকারভেদ বিভিন্ন ধরণের বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন রয়েছে, যা বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। ১. শুটিং স্টার (Shooting Star) শ...
আরও পড়ুন