মুভিং এভারেজ (Moving Average) কী?

 মুভিং এভারেজ একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইনডিকেটর, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে গড় মূল্য গণনা করে। এটি মূল্যের ওঠানামার গতিপ্রকৃতি বোঝাতে সাহায্য করে এবং বাজারের ট্রেন্ড সহজে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।

মুভিং এভারেজ মূলত অতীতের দামের তথ্য ব্যবহার করে এবং বর্তমান মূল্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তাই এটি ল্যাগিং ইনডিকেটর

মুভিং এভারেজের ধরণ

মুভিং এভারেজ মূলত দুই প্রকার:

  1. সিম্পল মুভিং এভারেজ (Simple Moving Average - SMA):

    • এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের গড় দাম গণনা করে।
    • উদাহরণ: ১০ দিনের SMA মানে শেষ ১০ দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড়।
    • ফর্মুলা: SMA=সর্বমোট মূল্য (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য)দিনের সংখ্যাSMA = \frac{\text{সর্বমোট মূল্য (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য)}}{\text{দিনের সংখ্যা}}
  2. এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং এভারেজ (Exponential Moving Average - EMA):

    • EMA সাম্প্রতিক মূল্যের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাই এটি দ্রুত বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
    • এটি দ্রুততর সংকেত প্রদান করে, যা স্ক্যাল্পিং বা ডে ট্রেডিংয়ের জন্য উপযোগী।

মুভিং এভারেজের সময়সীমা (Periods)

মুভিং এভারেজ বিভিন্ন সময়সীমায় ব্যবহার করা হয়।

  1. স্বল্পমেয়াদী:

    • উদাহরণ: ৯, ২০ দিন
    • দ্রুত বাজারের মুভমেন্ট দেখায়।
    • ডে ট্রেডারদের জন্য উপযোগী।
  2. মধ্যমেয়াদী:

    • উদাহরণ: ৫০ দিন
    • স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ডের মধ্যে সমন্বয় রাখে।
  3. দীর্ঘমেয়াদী:

    • উদাহরণ: ১০০, ২০০ দিন
    • দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা ব্যবহার করেন।
    • বড় ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে কার্যকর।

মুভিং এভারেজের উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং কৌশল

  1. মুভিং এভারেজ ক্রসওভার স্ট্র্যাটেজি:

    • কীভাবে কাজ করে?
      • ছোট সময়ের EMA বা SMA বড় সময়ের EMA বা SMA কে ক্রস করলে এটি একটি সংকেত দেয়।
      • বাই (Buy) সংকেত: স্বল্পমেয়াদী মুভিং এভারেজ দীর্ঘমেয়াদী মুভিং এভারেজের ওপরে উঠে গেলে।
      • সেল (Sell) সংকেত: স্বল্পমেয়াদী মুভিং এভারেজ দীর্ঘমেয়াদী মুভিং এভারেজের নিচে নেমে গেলে।
    • উদাহরণ:
      ৫০ দিনের SMA এবং ২০০ দিনের SMA ব্যবহার করে গোল্ডেন ক্রস (বাই সংকেত) এবং ডেথ ক্রস (সেল সংকেত) চিহ্নিত করা।
  2. মুভিং এভারেজ সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স হিসেবে ব্যবহার:

    • মুভিং এভারেজ লাইন অনেক সময় সাপোর্ট (মূল্যের নিচে) বা রেজিস্ট্যান্স (মূল্যের ওপরে) হিসেবে কাজ করে।
    • যদি দাম মুভিং এভারেজের নিচে থাকে, তাহলে এটি একটি সেল জোন। আর যদি উপরে থাকে, তাহলে এটি একটি বাই জোন।
  3. প্রাইস একশন এবং মুভিং এভারেজ:

    • প্রাইস যদি মুভিং এভারেজকে ভেঙে ওপরে যায়, তাহলে এটি একটি বাই সংকেত।
    • প্রাইস যদি মুভিং এভারেজকে ভেঙে নিচে যায়, তাহলে এটি একটি সেল সংকেত।
  4. ট্রেন্ড নির্ধারণের জন্য:

    • দাম যদি মুভিং এভারেজের উপরে থাকে, তাহলে আপট্রেন্ড।
    • দাম যদি মুভিং এভারেজের নিচে থাকে, তাহলে ডাউনট্রেন্ড।

মুভিং এভারেজের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা:

  • সহজ এবং কার্যকর টুল।
  • ট্রেন্ড নির্ধারণে কার্যকর।
  • নতুন ট্রেডারদের জন্য শেখা সহজ।

অসুবিধা:

  • ল্যাগিং ইনডিকেটর হওয়ায় দেরিতে সংকেত দেয়।
  • ফ্ল্যাট মার্কেটে ভুল সংকেত দিতে পারে।

মুভিং এভারেজ একটি শক্তিশালী টুল যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বাজারের ট্রেন্ড এবং সম্ভাব্য এন্ট্রি/এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণে সাহায্য করে। তবে এটি একা ব্যবহার না করে অন্যান্য ইনডিকেটরের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

Video material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার