একটি শেয়ারের Intrinsic Value (অন্তর্নিহিত মূল্য) বের করার ধাপ
একটি শেয়ারের Intrinsic Value (অন্তর্নিহিত মূল্য) হলো সেই মূল্য যা একটি কোম্পানির সম্পদ, আয় এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়, এবং এটি সাধারণত শেয়ারটির বর্তমান বাজারমূল্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে। Intrinsic value বের করার জন্য মূলত একটি কোম্পানির মৌলিক আর্থিক বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ আয় বা নগদ প্রবাহ অনুমান করা হয়। এখানে কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি দেওয়া হলো, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি একটি শেয়ারের Intrinsic Value বের করতে পারেন:
১. Discounted Cash Flow (DCF) Analysis:
DCF Analysis হলো একেকটি শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য বের করার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী পদ্ধতি। এটি ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহের (Cash Flow) অনুমান করে এবং সেই নগদ প্রবাহের বর্তমান মূল্য বের করে।
DCF পদ্ধতিতে Intrinsic Value বের করার ধাপ:
Future Cash Flows (ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহ) অনুমান করুন:
- কোম্পানির আগামী কয়েক বছরের জন্য নগদ প্রবাহ (Cash Flow) অনুমান করুন। সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য।
- নগদ প্রবাহের বৃদ্ধির হার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলি বিশ্লেষণ করুন।
Discount Rate (ডিসকাউন্ট হার) নির্বাচন করুন:
- ডিসকাউন্ট হারটি সেই হার যা আপনি ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহের বর্তমান মূল্য নির্ধারণে ব্যবহার করবেন। এটি সাধারণত Weighted Average Cost of Capital (WACC) দিয়ে গণনা করা হয়।
- WACC হল কোম্পানির মোট খরচের হার, যা মূলধন (Equity) এবং ঋণ (Debt)-এর সংমিশ্রণকে প্রতিফলিত করে।
Present Value (বর্তমান মূল্য) হিসাব করুন:
- প্রতি বছরের নগদ প্রবাহকে ডিসকাউন্ট করে তার বর্তমান মূল্য বের করুন।
- এইভাবে প্রতি বছরের জন্য নগদ প্রবাহের বর্তমান মূল্য যোগ করে একটি Total Present Value বের করুন।
Terminal Value (টার্মিনাল মূল্য) অনুমান করুন:
- DCF মডেলটির অন্তিম অংশে একটি টার্মিনাল মূল্য অনুমান করতে হয়, যা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহের স্থির বৃদ্ধির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
- টার্মিনাল ভ্যালু হিসাব করার জন্য, আপনার ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহের দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির হার (Perpetual Growth Rate) এবং ডিসকাউন্ট হার ব্যবহার করতে হবে।
Intrinsic Value বের করুন:
- বর্তমান মূল্য এবং টার্মিনাল ভ্যালুর যোগফলই কোম্পানির Intrinsic Value প্রদান করবে।
এখানে, t হলো সময়কাল এবং T হলো টার্মিনাল সময়কাল।
২. Earnings-Based Approach (EPS বা Earning per Share এর মাধ্যমে):
এটি একটি সহজ পদ্ধতি, যেখানে কোম্পানির Earnings Per Share (EPS) এবং তার ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির হার (Growth Rate) ব্যবহার করে অন্তর্নিহিত মূল্য বের করা হয়।
ধাপগুলো:
- EPS নির্বাচন করুন: কোম্পানির বর্তমান বা গত বছরের Earnings Per Share (EPS) নির্ধারণ করুন।
- Growth Rate অনুমান করুন: কোম্পানির ভবিষ্যৎ আয় বৃদ্ধির হার (Growth Rate) নির্ধারণ করুন। এটি সাধারনত গত বছরের আয় বৃদ্ধি বা কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসায়ের জন্য অনুমান করা হয়।
- P/E Ratio নির্বাচন করুন: সাধারণত, কোম্পানির Price to Earnings Ratio (P/E Ratio) তার শিল্প বা খাতের গড় P/E রেশিও এর সাথে তুলনা করে নির্বাচন করা হয়।
- Intrinsic Value বের করুন:
এটি একটি সরল পদ্ধতি, কিন্তু শুধুমাত্র কোম্পানির আয় এবং পিপিই অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া হিসাব।
৩. Price to Book Value (P/BV) পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে, শেয়ারের Book Value per Share এবং একটি উপযুক্ত Price to Book (P/B) রেশিও ব্যবহার করে অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ধাপগুলো:
- Book Value per Share বের করুন:
- P/B Ratio নির্বাচন করুন: সাধারণত, কোম্পানির P/B রেশিও তার শিল্পের গড় বা ঐতিহাসিক P/B রেশিও থেকে নির্ধারণ করা হয়।
- Intrinsic Value বের করুন:
৪. Dividend Discount Model (DDM):
যদি কোম্পানি নিয়মিত dividends (লভ্যাংশ) প্রদান করে, তবে Dividend Discount Model (DDM) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে কোম্পানির ভবিষ্যৎ লভ্যাংশ এবং তার ডিসকাউন্ট রেটের ভিত্তিতে অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ধাপগুলো:
- Expected Dividends (প্রত্যাশিত লভ্যাংশ): কোম্পানির ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
- Discount Rate (ডিসকাউন্ট হার): ডিসকাউন্ট হার নির্বাচন করুন (সাধারণত, এটি Cost of Equity বা Required Rate of Return হতে পারে)।
- Intrinsic Value বের করুন: Intrinsic Value=Discount Rate−Growth Rate Dividend per Share
এটি Gordon Growth Model হিসেবেও পরিচিত।
৫. Comparable Company Analysis (CCA):
এটি একটি তুলনামূলক পদ্ধতি, যেখানে আপনি একই শিল্পের বা বাজারে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্যান্য কোম্পানির মূল্যায়ন ব্যবহার করে একটি শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করেন।
ধাপগুলো:
- একই খাত বা শিল্পে বেশ কয়েকটি কোম্পানির P/E, P/B, EV/EBITDA, এবং অন্যান্য আর্থিক অনুপাত সংগ্রহ করুন।
- কোম্পানির P/E Ratio, P/B Ratio এবং অন্যান্য অনুপাতগুলো থেকে গড় বা অনুপাত বের করুন।
- সেই অনুপাতগুলিকে কোম্পানির নিজের আর্থিক বিশ্লেষণের সাথে তুলনা করুন এবং একটি যুক্তিসঙ্গত অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করুন।
শেয়ারের Intrinsic Value বের করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন DCF Analysis, Earnings-based Approach, Price to Book Ratio, Dividend Discount Model, এবং Comparable Company Analysis। তবে, এই পদ্ধতিগুলো সবই অনুমান ভিত্তিক এবং তাদের সঠিকতা নির্ভর করে সঠিক উপকরণ এবং অনুমান করা তথ্যের ওপর। সুতরাং, শেয়ারটি যদি বাজারমূল্য থেকে বেশি বা কম মূল্যায়িত হয়, তাহলে সেই শেয়ারটি কিনতে বা বিক্রি করতে সহায়ক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
Video material: