Gordon Growth Model (GGM) এর মূল ধারণা যা কোম্পানির শেয়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়

 Gordon Growth Model বা Traditional Dividend Discount Model (DDM) হলো একটি বিশেষ ধরনের DDM, যা কোম্পানির শেয়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে কোম্পানির লভ্যাংশ (dividends) একটি স্থির এবং ধারাবাহিক হারে বৃদ্ধি পায়। এটি Gordon Model নামেও পরিচিত, এবং এটি ১৯৫৯ সালে মাইকেল গর্ডন দ্বারা প্রথম প্রস্তাবিত হয়েছিল। এই মডেলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয় যখন কোম্পানি নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ প্রদান করে থাকে এবং ভবিষ্যতে লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Gordon Growth Model (GGM) এর মূল ধারণা:

GGM এর ভিত্তি হলো, একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য তার ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য (discounted value) হিসাব করা। এখানে, লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার (Growth Rate) স্থির ধরা হয় এবং ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য গণনা করার জন্য discount rate প্রয়োগ করা হয়।

Gordon Growth Model এর ফর্মুলা:

Gordon Growth Model এর প্রধান ফর্মুলা হল:

Intrinsic Value (P)=D1kg\text{Intrinsic Value (P)} = \frac{D_1}{k - g}

এখানে:

  • P = শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য বা বর্তমান মূল্য।
  • D₁ = পরবর্তী বছরের জন্য প্রত্যাশিত লভ্যাংশ (Dividend per Share for Next Year)।
  • k = ডিসকাউন্ট রেট বা প্রত্যাশিত রিটার্ন (Required Rate of Return)।
  • g = লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার (Dividend Growth Rate)।

ফর্মুলার বিশ্লেষণ:

  1. D₁ (Next Year’s Dividend):

    • এটি হলো পরবর্তী বছরের জন্য কোম্পানির শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ। সাধারণত এটি D₀ (বর্তমান বছরের লভ্যাংশ) থেকে বৃদ্ধি হওয়া হার (growth rate) প্রয়োগ করে বের করা হয়। অর্থাৎ,
    D1=D0×(1+g)D_1 = D_0 \times (1 + g)

    যেখানে, D₀ হলো বর্তমান বছরের লভ্যাংশ এবং g হলো লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার।

  2. k (Discount Rate):

    • ডিসকাউন্ট রেট বা প্রত্যাশিত রিটার্ন হল সেই হার, যেটি বিনিয়োগকারী একটি বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশা করেন। এটি কোম্পানির Cost of Equity হিসেবেও পরিচিত। এটি সাধারণত স্টক মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত রিটার্নের পরিমাণ। এটি ঐতিহাসিক পণ্যের রিটার্ন, ঝুঁকি, এবং অন্যান্য বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
  3. g (Growth Rate):

    • লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার (growth rate) হলো সেই হার, যেটিতে কোম্পানি তার লভ্যাংশের পরিমাণ প্রতি বছর বাড়াবে। সাধারণত এটি ঐতিহাসিক লভ্যাংশ বৃদ্ধি, কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, এবং শিল্পের প্রবণতার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়।

Gordon Growth Model এর ব্যবহার:

GGM প্রধানত dividend-paying companies (যে কোম্পানিগুলি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে) এর শেয়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই মডেলটি বিশেষভাবে উপযুক্ত যখন:

  • কোম্পানি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে।
  • ভবিষ্যতে লভ্যাংশের বৃদ্ধি একটি স্থিতিশীল হার দিয়ে অনুমান করা সম্ভব।
  • কোম্পানির লভ্যাংশের প্রবৃদ্ধি পরিমাপযোগ্য এবং পূর্বানুমানযোগ্য।

Gordon Growth Model এর সুবিধা:

  1. সরলতা এবং সহজ ব্যবহার: এই মডেলটি সরল এবং সহজ, যেহেতু এটি মাত্র তিনটি উপাদান থেকে গঠিত: লভ্যাংশ, ডিসকাউন্ট রেট এবং বৃদ্ধির হার।

  2. নির্দিষ্ট সাপেক্ষে কার্যকর: যখন একটি কোম্পানি একটানা লভ্যাংশ বৃদ্ধি করে এবং তার লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার প্রায় স্থির থাকে, তখন GGM অত্যন্ত কার্যকর।

  3. বিশ্বস্ততা: যেহেতু এটি একটি প্রতিষ্ঠিত মডেল, অনেক বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষক এই মডেলটি ব্যবহার করে তাদের শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করেন।

Gordon Growth Model এর সীমাবদ্ধতা:

  1. লভ্যাংশের নির্ভরতা: এই মডেলটি শুধুমাত্র সেই কোম্পানির জন্য উপযুক্ত, যেগুলি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে। যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ প্রদান করে না বা খুবই কম প্রদান করে, তাদের জন্য এই মডেলটি ব্যবহার করা যাবে না।

  2. স্থির বৃদ্ধির হার: মডেলটি ধরে নেয় যে লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার (g) স্থির এবং দীর্ঘকাল ধরে একই থাকবে। বাস্তবে, অনেক কোম্পানির লভ্যাংশের বৃদ্ধি একেবারে স্থির থাকে না, এবং তা বছরের পর বছর পরিবর্তিত হতে পারে।

  3. বিশ্লেষণের নির্ভুলতা: যদি লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার এবং ডিসকাউন্ট রেট সঠিকভাবে অনুমান করা না হয়, তাহলে ফলস্বরূপ শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্যও ভুল হতে পারে। তাই, অনুমান ভুল হলে গরমভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

  4. মডেলটির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া কঠিন হতে পারে: GGM এর সঠিক প্রয়োগের জন্য, সঠিক লভ্যাংশ বৃদ্ধি হার এবং ডিসকাউন্ট রেট অনুমান করা প্রয়োজন। অনেক সময় এসব অনুমান করার কাজটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষত অস্থির বা নতুন কোম্পানির জন্য।

  5. বাজারের অস্থিরতা: বাজারের অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, বা শিল্পের প্রবণতা GGM-এ অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়, ফলে মডেলটি সঠিক ফলাফল নাও দিতে পারে।

Gordon Growth Model এর উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি কোম্পানির পরবর্তী বছরে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ (D₁) ৫ টাকা, কোম্পানির required rate of return (k) ১০% এবং growth rate (g) ৫%।

তাহলে, Gordon Growth Model অনুযায়ী শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য হবে:

অর্থাৎ, কোম্পানির শেয়ারটির অন্তর্নিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা।

Gordon Growth Model একটি সরল এবং কার্যকরী পদ্ধতি, যা বিশেষভাবে দীর্ঘমেয়াদী, স্টেবল এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। তবে, এটি কিছু সীমাবদ্ধতা রাখে, বিশেষত যখন কোম্পানির লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার পরিবর্তনশীল হয় বা যখন কোম্পানি লভ্যাংশ প্রদান করে না। এজন্য, GGM সাধারণত স্টেবল এবং mature কোম্পানির শেয়ার মূল্য বিশ্লেষণে সবচেয়ে কার্যকর।

Study material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার