একটি শেয়ারের Fundamental Analysis করার জন্য যে ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন
শেয়ারের Fundamental Analysis (ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস) করার মাধ্যমে, আপনি সেই শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য বা বাস্তবিক মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। এটি মূলত কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতি, তার ব্যবসায়ের মডেল, মার্কেটের প্রতিযোগিতা, এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি সামর্থ্য বিশ্লেষণ করে। এই বিশ্লেষণ সাধারণত financial ratios, company’s earnings, growth potential, এবং market conditions দেখার মাধ্যমে করা হয়।
এখানে একটি শেয়ারের Fundamental Analysis করার জন্য যে ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন, তা বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:
১. কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা:
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন (যেমন Profit and Loss Statement, Balance Sheet, এবং Cash Flow Statement) পর্যালোচনা করে আপনি কোম্পানির আর্থিক সাস্থ বুঝতে পারেন। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দেখবেন:
Revenue (বিক্রয়):
কোম্পানির মোট আয় বা বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা দেখে বিশ্লেষণ করুন। দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি সাধারণত কোম্পানির শক্তিশালী বাজার অবস্থানকে নির্দেশ করে।
Net Profit (নিট প্রফিট):
নিট প্রফিট হল কোম্পানির সকল খরচ বাদ দিয়ে অর্জিত চূড়ান্ত মুনাফা। এটি কোম্পানির লাভজনকতা বুঝতে সাহায্য করে।
Earnings Per Share (EPS):
EPS হলো একটি কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয়। এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শেয়ার প্রতি আয় বা লাভ নির্দেশ করে।
Return on Equity (ROE):
ROE কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের উপর কতটা লাভ উৎপন্ন হয়েছে তা দেখায়।
Cash Flow:
কোম্পানির নগদ প্রবাহ বিশ্লেষণ করুন। এটি দেখাবে যে কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে কতটা নগদ প্রবাহ তৈরি হচ্ছে। নেতিবাচক নগদ প্রবাহ হতে পারে সংকেত যে কোম্পানির কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে।
২. Key Financial Ratios বিশ্লেষণ:
Financial Ratios বা আর্থিক অনুপাতগুলি একটি কোম্পানির আর্থিক কার্যকলাপ বুঝতে সাহায্য করে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত:
Price to Earnings Ratio (P/E Ratio):
P/E Ratio একটি শেয়ারের বাজারমূল্য ও তার আয় (EPS) এর তুলনা করে। এটি দেখায় একটি কোম্পানির শেয়ার কতটা সস্তা বা দামি:
- একটি কম P/E মানে শেয়ারটি তুলনামূলকভাবে সস্তা, এবং বেশি P/E মানে শেয়ারটি দামি হতে পারে। তবে, খুব বেশি P/E সাপোর্টহীন বৃদ্ধির সংকেতও হতে পারে।
Price to Book Ratio (P/B Ratio):
P/B Ratio কোম্পানির বাজারমূল্য এবং তার শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির তুলনা করে।
- যদি P/B ১ এর নিচে হয়, তবে শেয়ারটি বাজারের তুলনায় সস্তা বলে মনে হতে পারে।
Debt to Equity Ratio (D/E Ratio):
Debt to Equity Ratio কোম্পানির ঋণ এবং ইকুইটির অনুপাত দেখায়। এটি কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
- কম D/E মানে কোম্পানি কম ঋণ নিয়ে কাজ করছে, যা কম ঝুঁকি সূচিত করে।
Current Ratio:
Current Ratio কোম্পানির বর্তমান দায় পরিশোধের সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে।
- সাধারণত, ২ এর বেশি মানে কোম্পানি তার বর্তমান দায় পরিশোধ করতে সক্ষম।
৩. কোম্পানির ব্যবসা মডেল এবং মার্কেট পজিশন বিশ্লেষণ:
ব্যবসা মডেল:
কোম্পানির ব্যবসা মডেল কী? তারা কী ধরনের পণ্য বা সেবা সরবরাহ করছে? তাদের পণ্য বা সেবা বাজারে কিভাবে প্রতিযোগিতা করছে?
বাজার অবস্থান:
কোম্পানি কী ধরনের বাজারে কাজ করছে? তাদের প্রতিযোগিতা কেমন? তাদের বাজার শেয়ার কত? দীর্ঘমেয়াদী বাজার প্রবণতা কী? কোম্পানি কি নতুন পণ্য বা বাজারে প্রবেশ করছে?
বৃদ্ধির সম্ভাবনা:
কোম্পানির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কেমন? কি ধরনের পরিকল্পনা বা উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেছে? উদাহরণস্বরূপ, নতুন প্রযুক্তি, সম্প্রসারণ, বা অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে প্রবেশ।
৪. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং শিল্প বিশ্লেষণ:
মুদ্রা ও সুদের হার:
মুদ্রার অবস্থা এবং সুদের হার কোম্পানির ঋণ এবং মুনাফার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ সুদের হার কোম্পানির ঋণের খরচ বাড়াতে পারে, যা লাভ কমাতে পারে।
শিল্প প্রবণতা:
শিল্পের বর্তমান প্রবণতা কি? কোন বিশেষ শিল্পগুলো বৃদ্ধির পথে বা সংকটের মধ্যে রয়েছে? উদাহরণস্বরূপ, টেকনোলজি, গ্রিন এনার্জি, বা স্বাস্থ্য খাত।
মার্কেট চক্র:
কোম্পানির ব্যবসা সাইকেল এবং অর্থনৈতিক চক্রের মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করুন। একটি শিল্প বা কোম্পানি বিশেষভাবে উত্থান বা পতনকালীন সময়ে ভাল বা খারাপ করতে পারে।
৫. ম্যাক্রোইকোনমিক ফ্যাক্টর:
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি:
বিশ্বের বা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জিডিপি বৃদ্ধির হার, বেকারত্বের হার এবং অন্যান্য ম্যাক্রোইকোনমিক ফ্যাক্টর কোম্পানির ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নীতি এবং আইনগত পরিবেশ:
সরকারের নীতি, করের হার, শিল্প সম্পর্কিত আইন এবং রেগুলেটরি পরিবেশ কোম্পানির মুনাফা এবং ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
৬. ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্ব:
কোম্পানির leadership বা ব্যবস্থাপনা কেমন? তারা কি ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষ? অতীতে তাদের পরিচালনায় কোম্পানি কি ভালো ফলাফল দিয়েছে? একটি শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ পরিচালনা দল সাধারণত কোম্পানির বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একটি শেয়ারের Fundamental Analysis করতে হলে কোম্পানির আর্থিক বিশ্লেষণ, ব্যবসা মডেল, বাজার পজিশন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, এবং নেতৃত্ব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সবকিছু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে, আপনি বুঝতে পারবেন যে ওই শেয়ারের বাজার মূল্য তার বাস্তবিক মূল্য থেকে কম না বেশি এবং তা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হবে কিনা। Fundamental Analysis একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হলেও, এটি একজন বিনিয়োগকারীকে দীর্ঘমেয়াদী লাভ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
Video material: