Dividend Discount Model (DDM) কিভাবে কাজ করে ?

 Dividend Discount Model (DDM) একটি বহুল ব্যবহৃত ফাইনান্সিয়াল মডেল যা মূলত একটি কোম্পানির শেয়ারের intrinsic value (অন্তর্নিহিত মূল্য) নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যদি কোম্পানি নিয়মিত dividends (লভ্যাংশ) প্রদান করে থাকে। DDM, মূলত কোম্পানির ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের অনুমান করে এবং সেই লভ্যাংশকে ডিসকাউন্ট (বর্তমান মূল্য) করে শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য বের করে। এটি একটি Discounted Cash Flow (DCF) মডেলের বিশেষ রূপ, যেখানে ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহের বদলে শুধুমাত্র লভ্যাংশের প্রবাহের উপর ভিত্তি করা হয়।

Dividend Discount Model (DDM) কিভাবে কাজ করে?

DDM এ একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বর্তমান এবং ভবিষ্যতের লভ্যাংশের মাধ্যমে গণনা করা হয়। এটি dividends (লভ্যাংশ) কে ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহ হিসেবে মনে করে এবং সেই লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য বের করার জন্য Discount Rate প্রয়োগ করা হয়। ডিসকাউন্ট করা লভ্যাংশের যোগফলে একটি শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য পাওয়া যায়।

DDM এর মূল ধারণা:

DDM এর ভিত্তি হলো, একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য তার ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য (discounted value) এর যোগফল। এর মধ্যে কোম্পানির ভবিষ্যৎ লভ্যাংশ এবং একটি ডিসকাউন্ট রেট বা required rate of return ব্যবহার করা হয়।

DDM এর ফর্মুলা:

DDM এর প্রাথমিক ফর্মুলাটি হলো:

এখানে:

  • Dividend per Share (DPS): কোম্পানি প্রতি শেয়ারের জন্য কত লভ্যাংশ দিবে তা।
  • Discount Rate (k): এটি সেই হার যা বিনিয়োগকারী প্রত্যাশা করেন, অর্থাৎ তাদের প্রত্যাশিত রিটার্ন। সাধারণত, এটি কোম্পানির cost of equity হিসাবে নির্ধারিত হয়।
  • Growth Rate (g): কোম্পানির লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার, যা ভবিষ্যতে কতটা বৃদ্ধি পাবে তা অনুমান করা হয়।

এই ফর্মুলার মাধ্যমে, আপনি একটি শেয়ারের ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।

DDM এর ধরন:

DDM এর কয়েকটি ধরন রয়েছে, প্রতিটি ধরন আলাদা আলাদা ধরণের কোম্পানি এবং পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়।

১. Gordon Growth Model (ট্রেডিশনাল DDM):

এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং জনপ্রিয় DDM মডেল। এখানে, কোম্পানির লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার (Growth Rate) স্লো এবং ধারাবাহিক হিসেবে ধরা হয়। এই মডেলটি এমন কোম্পানির জন্য উপযুক্ত, যেগুলি একটানা স্থির হারে লভ্যাংশ বৃদ্ধি করে থাকে।

ফর্মুলা:

এখানে, "Dividend per Share in Next Year" (পরবর্তী বছরে শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ) হলো, বর্তমান বছর থেকে পরবর্তী বছরে প্রাপ্ত লভ্যাংশ এবং Growth Rate হলো লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার।

২. Two-Stage Dividend Discount Model:

এই মডেলটি এমন কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর প্রথম দিকে লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার দ্রুত থাকে এবং পরবর্তীতে তা স্লো হয়ে যায়। প্রথম ধাপে উচ্চ হারে লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে স্থির বৃদ্ধির হার ধরা হয়।

ফর্মুলা:

এখানে:

  • D1,D2,,DnD_1, D_2, \dots, D_n হলো নানান বছরগুলির জন্য প্রত্যাশিত লভ্যাংশ।
  • PnP_n হলো, শেষ বছরে শেয়ারের সম্ভাব্য মূল্য, যা সাধারণত perpetuity এর সাথে সম্পর্কিত।

৩. H-Model (Hybrid Model):

এই মডেলটি দুই পর্যায়ের বৃদ্ধির হারের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রথমে উচ্চ বৃদ্ধির হার এবং পরে ধীরে ধীরে কমে যাওয়া বৃদ্ধির হার ধরার মাধ্যমে এটি কাজ করে।


DDM এর ব্যবহার:

DDM সাধারণত ব্যবহৃত হয় যখন কোম্পানির একটি স্থির এবং পূর্বানুমানযোগ্য লভ্যাংশ পেমেন্ট ইতিহাস থাকে এবং সেই কোম্পানির ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার সঠিকভাবে অনুমান করা যায়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কোম্পানি যেমন:

  • Blue-chip stocks: এসব কোম্পানির জন্য DDM উপযুক্ত, কারণ তাদের দীর্ঘমেয়াদী লভ্যাংশ প্রদান ও বৃদ্ধি থাকে।
  • Dividend-paying companies: যেসব কোম্পানি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে, DDM তাদের জন্য উপযুক্ত।

DDM এর সুবিধা:

  1. সরলতা: DDM একটি সহজ এবং সরল পদ্ধতি যা প্রধানত লভ্যাংশ ভিত্তিক কোম্পানির মূল্যায়নে কার্যকর।
  2. স্টেবল কোম্পানির জন্য উপযুক্ত: যারা দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ প্রদান করে থাকে এবং ভবিষ্যতে লভ্যাংশের বৃদ্ধির হার অনুমানযোগ্য।

DDM এর সীমাবদ্ধতা:

  1. লভ্যাংশের নির্ভরতা: DDM কেবলমাত্র সেই কোম্পানির জন্য উপযুক্ত যারা নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে। যদি কোম্পানি লভ্যাংশ না দেয় বা তা অনেক অনিশ্চিত হয়, তবে DDM কার্যকর নয়।
  2. গ্রোথ রেট অনুমান: ভবিষ্যতে লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন হতে পারে, বিশেষত উদীয়মান বা অস্থির বাজারে।
  3. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বাদ দেয়া: DDM শুধুমাত্র লভ্যাংশের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, তাই কোম্পানির অন্যান্য আর্থিক অবস্থা বা বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয় না।


Dividend Discount Model (DDM) একটি শক্তিশালী মডেল যেটি লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির অন্তর্নিহিত মূল্য বের করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদী লভ্যাংশ বৃদ্ধি এবং সেই লভ্যাংশের বর্তমান মূল্য গণনা করে। DDM বিশেষভাবে সেই কোম্পানির জন্য উপযুক্ত যেগুলি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে এবং ভবিষ্যতে স্থিতিশীল লভ্যাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। তবে, DDM এর সঠিক ব্যবহার সঠিক ভবিষ্যৎ অনুমান এবং ডেটার ওপর নির্ভরশীল, যা সঠিকভাবে না জানলে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।

Video material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার