ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন: বিস্তারিত ব্যাখ্যা

 ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ কন্টিনিউয়েশন প্যাটার্ন (bearish continuation pattern), যা সাধারণত একটি বেয়ারিশ ট্রেন্ডের সময় গঠিত হয়। এই প্যাটার্নটি মূলত দাম সাইডওয়ে বা কনসোলিডেশন ফেজে চলে আসার পর একটি ব্রেকআউট সৃষ্টি করে, যার ফলে দাম নিচে চলে যেতে পারে। ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গলটি একটি ত্রিভুজ আকারের প্যাটার্ন, যার এক দিকে লোয়ার হাই (lower highs) এবং অন্য দিকে ফ্ল্যাট লো (flat lows) তৈরি হয়।

এই প্যাটার্নটি সাধারণত একটি দুর্বল বাজারের সংকেত দেয় এবং ব্রেকআউটের পরে দাম নিম্নমুখী প্রবাহের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নের গঠন:

  1. লোয়ার হাই (Lower Highs):

    • ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, দাম ক্রমাগত লোয়ার হাই তৈরি করে। অর্থাৎ, দাম পূর্ববর্তী উচ্চতার থেকে কম (lower) উচ্চতা তৈরি করে এবং এটি একটি সংকুচিত ত্রিভুজের আকার ধারণ করে।
  2. ফ্ল্যাট লো (Flat Lows):

    • এই প্যাটার্নের নিচের দিকটি ফ্ল্যাট লো তৈরি করে, যার মানে হল দাম একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছানোর পর আরও নিচে যায় না এবং বেশ কিছু সময় ধরে সেই স্তরে আটকে থাকে। এটি সাধারণত সমর্থন স্তরের কাছাকাছি তৈরি হয়।
  3. প্যাটার্নের সীমানা:

    • এই প্যাটার্নে, দাম ক্রমাগত একটি সংকীর্ণ পরিসরে ওঠানামা করে, যেখানে উপরের দিকে লোয়ার হাই এবং নিচের দিকে ফ্ল্যাট লো তৈরি হয়। এর ফলে একটি ত্রিভুজ আকারের কনসোলিডেশন তৈরি হয় এবং পরে দাম ব্রেকআউট করে।
  4. ব্রেকআউট:

    • ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নটি সাধারণত বেয়ারিশ ব্রেকআউট (bearish breakout) এর দিকে চলে যায়, যেখানে দাম প্যাটার্নের নিচের সীমানা ভেঙে চলে যায়।
    • ব্রেকআউটের পর, দাম নিচে চলে যেতে পারে এবং বেয়ারিশ প্রবণতা শক্তিশালী হতে পারে।

ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নের ট্রেডিং কৌশল:

  1. প্যাটার্ন সনাক্ত করা:

    • প্রথমে একটি বেয়ারিশ ট্রেন্ডের সময় ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন চিহ্নিত করুন, যেখানে দাম নিয়মিতভাবে লোয়ার হাই তৈরি করছে এবং উপরের দিকে ফ্ল্যাট লো তৈরি করছে।
    • দাম সংকীর্ণ পরিসরে ওঠানামা করছে এবং একদিকে ধীরে ধীরে নিচে চলে আসছে, যা ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন গঠন করছে।
  2. ব্রেকআউটের জন্য অপেক্ষা করুন:

    • প্যাটার্নটি ব্রেকআউট হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে, দাম ফ্ল্যাট লো সীমানা ভেঙে নিচে চলে যাবে, যা বেয়ারিশ ব্রেকআউটের সংকেত দেয়।
    • ব্রেকআউটের পর, দাম আরও নিচে চলে যেতে পারে এবং বেয়ারিশ প্রবণতা শুরু হতে পারে।
  3. ভলিউমের গুরুত্ব:

    • ব্রেকআউটের সময় ভলিউম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভলিউম ব্রেকআউটের সাথে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ সংকেত হতে পারে। যদি ভলিউম কম থাকে, তবে এটি একটি ভ্রান্ত ব্রেকআউট হতে পারে এবং দাম পূর্বের স্তরে ফিরে আসতে পারে।
  4. স্টপ লস এবং প্রফিট টার্গেট:

    • স্টপ লস সাধারণত প্যাটার্নের উপরের সীমানা বা শক্তিশালী রেজিস্ট্যান্স স্তরের কাছে রাখা হয়।
    • প্রফিট টার্গেট প্যাটার্নের উচ্চতা থেকে অনুমান করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ট্রায়াঙ্গলের উচ্চতা ১০ পয়েন্ট হয়, তবে ব্রেকআউটের পর দাম সেই ১০ পয়েন্ট নিচে যেতে পারে।


ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নের শক্তি এবং দুর্বলতা:

শক্তি:

  1. বেয়ারিশ কন্টিনিউয়েশন: ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল সাধারণত একটি বেয়ারিশ কন্টিনিউয়েশন প্যাটার্ন। এটি একটি বেয়ারিশ ট্রেন্ডের মাঝে গঠিত হয় এবং প্যাটার্নের ব্রেকআউটের পর দাম আরও নিচে চলে যেতে পারে।
  2. স্পষ্ট এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট: প্যাটার্নের ব্রেকআউট পয়েন্ট এবং স্টপ লস স্তর স্পষ্ট থাকে, যা ট্রেডারদের জন্য সুবিধাজনক।
  3. উচ্চ রিওয়ার্ড-টু-রিস্ক রেশিও: সঠিকভাবে ট্রেড করলে ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নটি একটি উচ্চ রিওয়ার্ড-টু-রিস্ক রেশিও প্রদান করতে পারে, কারণ দাম ব্রেকআউটের পরে একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ প্রবণতার দিকে চলে যেতে পারে।

দুর্বলতা:

  1. ভ্রান্ত ব্রেকআউট: ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নে ভ্রান্ত ব্রেকআউট হতে পারে, যেখানে দাম ফ্ল্যাট লো ভেঙে নিচে চলে যাওয়ার পর আবার উর্ধ্বমুখী হতে পারে। এটি বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।
  2. সময় নেয়: প্যাটার্নটি গঠিত হতে কিছু সময় নেয় এবং অনেক সময় ব্রেকআউট হতে সপ্তাহ বা দিন লাগে।
  3. ট্রেন্ডের শক্তি নির্ভরশীলতা: ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্নটি একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ ট্রেন্ডের পরেই কার্যকর। এটি যদি একটি দুর্বল বা সাইডওয়ে ট্রেন্ডের মাঝে গঠিত হয়, তবে এটি কার্যকর নাও হতে পারে।

উদাহরণ:

  1. বেয়ারিশ ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন:

    • দাম একটি নিম্নমুখী বেয়ারিশ ট্রেন্ডের মধ্যে ওঠানামা করে। দাম ক্রমাগত নতুন নিম্ন উচ্চতা (lower highs) তৈরি করে, কিন্তু ফ্ল্যাট লো (flat lows) তৈরি হয়।
    • কিছুদিন পর, দাম এই ফ্ল্যাট লো ভেঙে নিচে চলে যায়, যা বেয়ারিশ প্রবণতার সংকেত দেয়।
  2. বুলিশ ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন:

    • এটি সাধারণত বিরল, তবে কখনও কখনও যদি প্যাটার্নটি ভুল ব্রেকআউট হিসেবে কাজ করে এবং দাম ফ্ল্যাট লো ভেঙে উর্ধ্বমুখী চলে যায়, তবে এটি একটি বুলিশ ব্রেকআউট হতে পারে।

ডিসেন্ডিং ট্রায়াঙ্গল প্যাটার্ন একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ কন্টিনিউয়েশন প্যাটার্ন, যা বাজারে একটি নিম্নমুখী প্রবণতা শক্তিশালী হওয়ার সংকেত দেয়। এটি সঠিকভাবে ট্রেড করলে লাভজনক হতে পারে, তবে ব্রেকআউটের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

Video material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার