প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং কি?

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং একটি ট্রেডিং কৌশল, যা মূলত শুধুমাত্র মূল্য (Price) এর গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রযুক্তিগত সূচক (indicators) বা অন্য কোনও মৌলিক বিশ্লেষণ ব্যবহার না করে, সরাসরি মার্কেটের দাম বা প্রাইস এর গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হয়।

অর্থাৎ, প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংয়ে, আপনি সরাসরি চার্টের দামে ফোকাস করেন এবং সেখান থেকে আপনার ট্রেডিং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন প্যাটার্ন, ক্যান্ডেলস্টিক ফর্মেশন, সাপোর্ট-রেসিস্ট্যান্স লেভেল, এবং অন্যান্য মূল্যগত উপাদান বিশ্লেষণ করা হয়।

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে?

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং মূলত এই ধারণা অনুসরণ করে:

মূল্যগত আন্দোলন (Price Movement): যে দাম আন্দোলন হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করা।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns): ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে ট্রেডিং সিগন্যাল পাওয়া।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স (Support and Resistance): মূল্য যেখানে থেমে যায় বা পরিবর্তন হয়, তা চিহ্নিত করা।

এই ধরনের ট্রেডিংয়ে সাধারণত মৌলিক বিশ্লেষণ বা ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয় না, বরং মূল্যগত আচরণ এবং তার গতিবিধি থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো:

দাম কোথায় থামবে বা বিপরীত হবে?
কোন প্যাটার্ন বা স্তরে দাম পরিবর্তিত হবে?

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংয়ের মূল উপাদানসমূহ

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns)
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলি দাম কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা দেখায় এবং তা থেকে পরবর্তী মূল্য আন্দোলন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন:
- Doji: বাজারে অস্থিরতা বা সমতা নির্দেশ করে।
- Hammer: এটি একটি বুলিশ (uptrend) সিগন্যাল হতে পারে।
- Engulfing: এটি বাজারে প্রবল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
- Pin Bar: প্রবণতার পরিবর্তন বা রিভার্সাল চিহ্নিত করে।
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স (Support and Resistance)
- সাপোর্ট: দাম নিচে নামার আগে একটি স্তর যেখানে মূল্য থেমে যায়।
- রেসিস্ট্যান্স: দাম উপরে উঠার আগে একটি স্তর যেখানে মূল্য থেমে যায়।
এই সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লেভেলগুলি চিহ্নিত করা এবং মূল্য যখন এই স্তরের কাছাকাছি চলে আসে, তখন ট্রেডারেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ট্রেন্ড লাইন (Trend Lines)
প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংয়ে মূলত মূল্যের চলন বুঝে ট্রেন্ডলাইন আঁকা হয়। এটি একটি "আপওয়ার্ড ট্রেন্ড" বা "ডাউনওয়ার্ড ট্রেন্ড" নির্দেশ করতে পারে।
- আপওয়ার্ড ট্রেন্ড: দাম ঊর্ধ্বমুখী চলতে থাকে।
- ডাউনওয়ার্ড ট্রেন্ড: দাম নিম্নমুখী চলতে থাকে।
চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns)
প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংয়ে কিছু সাধারণ চার্ট প্যাটার্ন যেমন:
- Head and Shoulders: বিপরীত বা রিভার্সাল সিগন্যাল।
- Triangles: ধারাবাহিকতা বা বিরতির সিগন্যাল হতে পারে।
- Flags and Pennants: শক্তিশালী ট্রেন্ড অব্যাহত থাকার সংকেত।

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং এর সুবিধা

সরলতা:
প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংটি সহজ এবং সরল। এখানে কোনো জটিল প্রযুক্তিগত সূচক বা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই, আপনি সরাসরি মূল্যগত আন্দোলন দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ফাস্ট ডিসিশন:
এর মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব, কারণ প্রাইস অ্যাকশন প্যাটার্নগুলির উপর ভিত্তি করে খুব অল্প সময়ে ট্রেড নেওয়া যায়।
বাজারের প্রকৃতি বোঝা:
প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং বাজারের প্রকৃতির (Market Sentiment) ব্যাপারে গভীর ধারণা দেয়, কারণ এটি সরাসরি বাজারের দাম এবং তার গতিবিধির উপর ভিত্তি করে।
ইন্ডিকেটরের উপর নির্ভরতা কম:
এই কৌশলে আপনি কোনো নির্দিষ্ট ইন্ডিকেটরের উপর নির্ভর না করে, বাজারের মূল মুভমেন্ট এবং তার আচরণ বোঝার চেষ্টা করেন।

প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং এর অসুবিধা

কিছুটা অভিজ্ঞতা প্রয়োজন:
প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিংতে সফল হতে হলে, আপনার কিছু অভিজ্ঞতা এবং মূল্য আন্দোলন বোঝার দক্ষতা থাকা জরুরি। নতুনদের জন্য এটি কিছুটা কঠিন হতে পারে।
মার্কেটের রকমফের:
কখনও কখনও প্রাইস অ্যাকশন প্যাটার্নগুলির কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, কারণ মূল্য কখনও কখনও পূর্বাভাসের বিপরীতে যেতে পারে।
ঝুঁকি:
যেহেতু এখানে কেবল মূল্যগত আন্দোলন দেখে ট্রেড করা হয়, তাই এটা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ অনেক সময় বাজারের আচরণ আগের থেকে পরিবর্তিত হতে পারে।