শেয়ারবাজারে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স: বিস্তারিত আলোচনা

শেয়ারবাজারে সাপোর্ট (Support) এবং রেসিস্ট্যান্স (Resistance) হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা মূলত প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের অংশ। এই দুইটি ধারণা ব্যবহার করে বিনিয়োগকারী এবং ট্রেডাররা বাজারের মূল্যের গতিপ্রকৃতি এবং সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স কী?

সাপোর্ট (Support):

সাপোর্ট একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর, যেখানে বাজারের ক্রেতারা সক্রিয় হয় এবং মূল্যের পতন থামিয়ে দেয়।সাপোর্ট একটি টেকনিক্যাল স্তর, যেখানে বাজারের দাম নিম্নমুখী হওয়ার সময় ক্রেতাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং বিক্রেতাদের চাপ দুর্বল হয়ে যায়, ফলে দাম ওই স্তরে স্থিতিশীল বা উল্টে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। এটি এমন একটি অঞ্চল, যেখানে ক্রেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বাজারে নতুন এন্ট্রি নেয়, যা দামকে আরও নিচে নামা থেকে বাধা দেয়। সাপোর্ট লেভেল সাধারণত অতীতের দামের নিম্নতম বিন্দু বা গুরুত্বপূর্ণ টুল, যেমন মুভিং অ্যাভারেজ বা ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট, দিয়ে নির্ধারণ করা যায়। যখন একটি সাপোর্ট স্তর ভেঙে যায়, তখন এটি নতুন রেসিস্ট্যান্স স্তরে পরিণত হয়। সাপোর্ট লেভেলে বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যেমন হ্যামার বা বুলিশ এঙ্গালফিং, প্রায়ই দেখা যায়, যা বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সম্ভাবনা বাড়ায়। সাপোর্ট লেভেল সঠিকভাবে চিহ্নিত করা ট্রেডারদের ঝুঁকি কমাতে এবং সঠিক এন্ট্রি পয়েন্ট নির্ধারণে সাহায্য করে।

  • সাপোর্ট লেভেলে চাহিদা (Demand) বৃদ্ধি পায়।
  • এই স্তরে ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করে এবং মূল্যের পতন রোধ করে।
  • এটি একটি "মেঝে" হিসেবে কাজ করে।

রেসিস্ট্যান্স (Resistance):

রেসিস্ট্যান্স এমন একটি টেকনিক্যাল স্তর, যেখানে বাজারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সময় বিক্রেতাদের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যায়, ফলে দাম ওই স্তরে থমকে যায় বা উল্টে নিম্নমুখী হতে শুরু করে। এটি এমন একটি অঞ্চল, যেখানে বিক্রেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বাজারে বিক্রয় চাপ সৃষ্টি করে, যা দামকে আরও ওপরে ওঠা থেকে বাধা দেয়। রেসিস্ট্যান্স লেভেল সাধারণত অতীতের দামের সর্বোচ্চ বিন্দু বা টেকনিক্যাল টুল, যেমন মুভিং অ্যাভারেজ, ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট, বা ট্রেন্ডলাইন, দিয়ে নির্ধারণ করা যায়। যখন একটি রেসিস্ট্যান্স স্তর ভেঙে যায়, তখন এটি নতুন সাপোর্ট স্তরে পরিণত হয়। রেসিস্ট্যান্স লেভেলে বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যেমন শুটিং স্টার বা বিয়ারিশ এঙ্গালফিং, প্রায়ই দেখা যায়, যা বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার সম্ভাবনা নির্দেশ করে। রেসিস্ট্যান্স লেভেল সঠিকভাবে চিহ্নিত করা ট্রেডারদের লাভজনকভাবে এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।

রেসিস্ট্যান্স একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর, যেখানে বাজারের বিক্রেতারা সক্রিয় হয় এবং মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামিয়ে দেয়।

  • রেসিস্ট্যান্স লেভেলে সরবরাহ (Supply) বৃদ্ধি পায়।
  • এই স্তরে বিক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করে এবং মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে।
  • এটি একটি "ছাদ" হিসেবে কাজ করে।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্সের গুরুত্ব

  1. মূল্যের প্রবণতা নির্ধারণে সহায়ক:
    সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা (Trend) সহজে নির্ধারণ করা যায়।

  2. লেনদেনের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে:
    এই স্তরগুলি বুঝে বিনিয়োগকারী বা ট্রেডাররা সঠিক সময়ে কেনা বা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

  3. ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ:
    সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লেভেলের সাহায্যে স্টপ লস এবং প্রফিট বুকিং পরিকল্পনা করা সহজ হয়।

  4. বাজার বিশ্লেষণের সহজ পদ্ধতি:
    নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি বাজার বিশ্লেষণের একটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স চিহ্নিত করার উপায়

১. মূল্য চার্ট বিশ্লেষণ (Price Chart Analysis):

  • অতীতের সেই মূল্যস্তর খুঁজে বের করুন, যেখানে দাম বারবার ফিরে এসেছে।
  • উদাহরণ: যদি একটি স্টকের মূল্য ৫০ টাকার নিচে না নামে, তবে এটি সাপোর্ট লেভেল হতে পারে।

২. প্রযুক্তিগত সূচক ব্যবহার (Technical Indicators):

  • মুভিং অ্যাভারেজ (Moving Average): মুভিং অ্যাভারেজ লাইন কখনো কখনো সাপোর্ট বা রেসিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে।
  • ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি মূল্যের সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণে সহায়ক।

৩. ট্রেন্ডলাইন আঁকা (Drawing Trendlines):

  • একটি ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডে নিচের দিকের ট্রেন্ডলাইন সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।
  • একটি নিম্নমুখী ট্রেন্ডে উপরের দিকের ট্রেন্ডলাইন রেসিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে।

৪. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis):

  • সাপোর্ট লেভেলে ভলিউম বৃদ্ধি চাহিদার শক্তি নির্দেশ করে।
  • রেসিস্ট্যান্স লেভেলে ভলিউম বৃদ্ধি সরবরাহের শক্তি নির্দেশ করে।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্সের ব্যবহার

১. এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ:

  • সাপোর্ট লেভেল: সাপোর্টে পৌঁছালে স্টক কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • রেসিস্ট্যান্স লেভেল: রেসিস্ট্যান্সে পৌঁছালে স্টক বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

২. স্টপ লস স্থাপন:

  • সাপোর্টের নিচে স্টপ লস দিলে বাজার বিপরীত দিকে গেলে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৩. ব্রেকআউট এবং ব্রেকডাউন সনাক্ত:

  • ব্রেকআউট (Breakout): যদি মূল্য রেসিস্ট্যান্স লেভেল ভেঙে উপরের দিকে যায়, তবে এটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সংকেত।
  • ব্রেকডাউন (Breakdown): যদি মূল্য সাপোর্ট লেভেল ভেঙে নিচের দিকে যায়, তবে এটি নিম্নমুখী প্রবণতার সংকেত।

৪. পুনঃপরীক্ষা (Retest):

  • অনেক সময় সাপোর্ট ভেঙে গেলে তা রেসিস্ট্যান্সে পরিণত হয়। একইভাবে, রেসিস্ট্যান্স ভেঙে গেলে তা সাপোর্টে পরিণত হয়।

উদাহরণ

সাপোর্ট লেভেলের উদাহরণ:

একটি স্টকের দাম বারবার ₹১০০ এ পৌঁছে পুনরায় উপরে উঠে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ₹১০০ সাপোর্ট লেভেল।

রেসিস্ট্যান্স লেভেলের উদাহরণ:

একটি স্টকের দাম বারবার ₹১৫০ এ পৌঁছে নিচে নেমে যায়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ₹১৫০ রেসিস্ট্যান্স লেভেল।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্সের সীমাবদ্ধতা

  1. এটি সবসময় সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
  2. অতীতের ডেটার উপর নির্ভরশীল, যা ভবিষ্যতের বাজারে প্রভাবিত হতে পারে।
  3. অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ঘটনা এই স্তরগুলি ভেঙে ফেলতে পারে।

শেয়ারবাজারে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স বাজারের মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ স্তর নির্দেশ করে। এগুলি বিনিয়োগকারী এবং ট্রেডারদের বাজারের প্রবণতা বুঝতে এবং সঠিক লেনদেনের সময় নির্ধারণে সহায়ক।

তবে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স বিশ্লেষণের সময় অন্যান্য প্রযুক্তিগত এবং মৌলিক বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ এবং চর্চার মাধ্যমে এই পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।


Video material: 


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার