ইন্ট্রাডে ট্রেডিং: এটি কিভাবে করা উচিত?

-

ইন্ট্রাডে ট্রেডিং বা ডে ট্রেডিং হলো এমন একটি শেয়ার বাজার কৌশল, যেখানে ট্রেডাররা এক দিনে একাধিক ট্রেড করে মুনাফা অর্জন করার চেষ্টা করেন। এটি শেয়ার বা স্টক কেনা এবং বিক্রি করার প্রক্রিয়া, যা একই দিনের মধ্যে সম্পন্ন হতে হয়। তবে, যেহেতু এটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাই সঠিক কৌশল অবলম্বন না করলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া সম্ভব।

এখানে ইন্ট্রাডে ট্রেডিং কিভাবে সঠিকভাবে করা যেতে পারে, তার বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

১. মার্কেট রিসার্চ এবং প্রস্তুতি

ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের প্রথম ধাপ হলো বাজারের বিশ্লেষণ এবং প্রস্তুতি। শেয়ার বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি:

  • টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: সঠিকভাবে গ্রাফ, সূচক, প্যাটার্ন, এবং ভলিউম বিশ্লেষণ করা উচিত।
  • ট্রেন্ড ফলো করুন: মার্কেটের ট্রেন্ড বুঝতে হবে, যেমন শেয়ারটি উর্ধ্বমুখী কিনা, অথবা নিম্নমুখী।
  • মনে রাখবেন মার্কেটের অস্থিরতা: ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে বাজার অস্থিরতা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

২. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেডের আগে আপনি কতটুকু ঝুঁকি নিতে পারেন তা ঠিক করে নিতে হবে।

  • স্টপ-লস অর্ডার: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল, যা আপনার ক্ষতি সীমিত রাখে। ট্রেডের ক্ষেত্রে আপনি যখন নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছবেন, তখন আপনার শেয়ারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রি হয়ে যাবে।
  • ট্রেডের আকার নির্ধারণ: আপনার একক ট্রেডে কতটুকু পুঁজি ব্যবহার করবেন তা অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।

৩. নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা

আপনি যখন একটি ইন্ট্রাডে ট্রেড শুরু করবেন, তখন আপনার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, আপনি প্রতিদিন কত শতাংশ লাভ করতে চান বা কতটুকু ক্ষতি সহ্য করতে পারবেন, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিন। এর মাধ্যমে আপনি অস্থির মার্কেট পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

৪. সঠিক সময় নির্বাচন করা

ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে সঠিক সময় নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিনের মধ্যে বাজারের খোলার সময় এবং বন্ধের সময়ে পরিবর্তন হতে থাকে।

  • বাজার খোলার সময়: বাজার খোলার প্রথম ঘন্টাটি অত্যন্ত অস্থির থাকে, কিন্তু এখানেই অনেক বেশি সুযোগ থাকে।
  • মার্কেট ক্লোজিং এর সময়: ক্লোজিং সময়েও বাজারে একটি শেষ মুহূর্তের লেনদেন ঘটে, তবে এটা অনেক সময় অস্থির হতে পারে।

৫. একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করুন

একটি সফল ইন্ট্রাডে ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরির জন্য একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ট্রেডের লক্ষ্য, ঝুঁকি, লাভ এবং ট্রেডের সময়কাল সম্পর্কিত সবকিছু কভার করবে।

  • কৌশলগত প্রবৃদ্ধি: ভালো ট্রেডিং কৌশল হলে, আপনি পূর্ববর্তী ট্রেডের ভিত্তিতে পরবর্তী ট্রেডে সুবিধা পাবেন।
  • মনে রাখুন আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে: লাভ বা ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আবেগে প্রভাবিত হওয়া একেবারে উচিত নয়। আপনার পরিকল্পনা অনুসরণ করা জরুরি।

৬. প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবহার

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যা আপনাকে শেয়ার বাজারের পূর্বাভাস এবং বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে। কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার যেমন MetaTrader 4/5, TradingView, ইত্যাদি ট্রেডারদের জন্য কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।

৭. মনোযোগ এবং ডিসিপ্লিন

ইন্ট্রাডে ট্রেডিং একটি খুবই দ্রুতগতির এবং চাপপূর্ণ কাজ। এর জন্য আপনাকে সবসময় মনোযোগী এবং ডিসিপ্লিনড থাকতে হবে। ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি যদি কোনো ভুল করেন, তাহলে সেটি আপনার পুরো ট্রেডিং পরিকল্পনাকে নষ্ট করতে পারে।

ইন্ট্রাডে ট্রেডিং একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক কৌশল, গভীর বাজার বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা। এটির জন্য সময়, প্র্যাকটিস এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাজারের যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি একটি সফল ইন্ট্রাডে ট্রেডার হতে পারেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাংল: কী এবং কীভাবে করতে হয়?

-
ছবি
Straddle একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল , যেখানে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং একই এক্সপায়ারি ডেট সহ একটি Call Option এবং একটি Put Option একসঙ্গে কেনা হয়। এটি মূলত বাজারের উল্লেখযোগ্য ভোলাটিলিটি আশা করা হলে ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলটি বাজারের দিক সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো অনুমানের প্রয়োজন হয় না , কারণ এতে লাভের সম্ভাবনা বাজারের উত্থান বা পতন , উভয় ক্ষেত্রেই থাকে। Straddle- এর দুটি প্রকার রয়েছে : Long Straddle এবং Short Straddle । Long Straddle- এ একটি Call Option এবং একটি Put Option কেনা হয়। এই পদ্ধতিতে লাভ তখন হয় যখন স্টকের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে বা কমে। অন্যদিকে , Short Straddle- এ একই ধরনের অপশন বিক্রি করা হয়। এতে লাভের সুযোগ থাকে যদি স্টকের দাম স্থিতিশীল থাকে। তবে Short Straddle- এর ঝুঁকি বেশি , কারণ স্টকের দাম বড় পরিবর্তন করলে এটি অসীম ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। Long Straddle ব্যবহৃত হয় যখন বাজারে উচ্চ ভোলাটিলিটি আশা করা হয় এবং স্টকের দাম বড় পরিসরে পরিবর্তিত হতে প...
আরও পড়ুন

SIP করার সময় ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

-
ছবি
সিপ (SIP) বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান আজকাল প্রায় সবাই করেন। নিজের অবসর জীবন, মেয়ের পড়াশোনা বা ছেলের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করা হয়। কিন্তু যদি আপনি টাকা তোলার সময় দেখেন যে বাজার ধসের কারণে আপনার SIP ফান্ডের অর্ধেক মূল্য কমে গেছে, তখন কী করবেন? ঝুঁকি কীভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। সিপ-এ ঝুঁকির বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ? সাধারণত সবাই জানেন, মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সিপ-এ বিনিয়োগ করলে কিছু বছর পর বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু লাভের কথা যতটা বলা হয়, ঝুঁকির বিষয়ে ততটা আলোচনা করা হয় না। ইতিহাসে বাজারের ওঠানামা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সেনসেক্স ১০০ থেকে ৮০,০০০-এ পৌঁছাতে ৪৪ বছর লেগেছে। এই সময়ে সেনসেক্স বহুবার ৫০%-এর বেশি পড়ে গেছে। SIP বিনিয়োগকারীর অভিজ্ঞতা যদি কেউ ১৯৯০ সাল থেকে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা SIP-এ বিনিয়োগ করেন, তার মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা, কিন্তু তার বর্তমান ফান্ড মূল্য ২৫ লাখ টাকারও বেশি। এই ফান্ড তৈরি করতে বিনিয়োগকারীকে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, SIP বিনিয়োগকারীকে বাজারের বিভিন্ন পতন দে...
আরও পড়ুন

বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিশদ বিবরণ ও ব্যবহার

-
ছবি
 বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Bearish Candlestick Pattern) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ চার্টিং পদ্ধতি যা বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার সংকেত প্রদান করে। এই প্যাটার্নগুলো বাজারে বিক্রেতাদের আধিপত্য নির্দেশ করে এবং ভবিষ্যতে দামের পতনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। শেয়ারবাজার, ফরেক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি, এবং অন্যান্য আর্থিক বাজারে ট্রেডারদের জন্য বেয়ারিশ প্যাটার্ন বোঝা এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন কী? বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এমন একটি চার্ট প্যাটার্ন যা নির্দেশ করে যে বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হতে চলেছে। এই প্যাটার্নগুলি সাধারণত উচ্চ প্রাইস থেকে নিম্ন প্রাইসের দিকে দামের পরিবর্তন বোঝায়। বৈশিষ্ট্য: ক্লোজিং প্রাইস ওপেনিং প্রাইসের চেয়ে কম হয়। বড় বডি এবং ছোট উইক/শ্যাডো থাকতে পারে। লাল বা কালো রঙের ক্যান্ডেল, যা দামের নিম্নগতি নির্দেশ করে। বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের প্রকারভেদ বিভিন্ন ধরণের বেয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন রয়েছে, যা বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। ১. শুটিং স্টার (Shooting Star) শ...
আরও পড়ুন